Pain on both sides of the waist1

কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ সমূহ

কোমরের দুই পাশে ব্যথা বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে এক সাধারণ সমস্যা। আধুনিক জীবনযাপন, দীর্ঘক্ষণ বসা বা দাঁড়ানো, এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস অনেকসময় এই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় বা মাসিক চক্রের সময় কোমরের ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে। এই ব্যথা কখনো হালকা অস্বস্তি হিসেবে শুরু হয়, আবার কখনো দৈনন্দিন কাজকর্মে বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।

কোমরের দুই পাশে ব্যথা শুধু শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত নয়, এটি অনেক সময় শরীরের ভেতরের অন্যান্য সমস্যারও সংকেত দিতে পারে। যেমন কিডনি, মূত্রনালী, বা পেশি সংক্রান্ত জটিলতা। তাই ব্যথার ধরন, সময়কাল এবং সঙ্গে থাকা অন্যান্য লক্ষণগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের নারী সমাজে কমর ব্যথা প্রায়শই অবহেলিত সমস্যা। অনেকে মনে করেন এটি সাধারণ বয়সজনিত সমস্যা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, নিয়মিত ব্যথা কখনো কখনো মারাত্মক রোগের সূচক হতে পারে।

এ ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ, তা কিসের লক্ষণ হতে পারে, এবং কীভাবে সচেতনতা ও প্রাকৃতিক প্রতিকার দ্বারা এই সমস্যা মোকাবিলা করা যায়। আমাদের লক্ষ্য হলো পাঠকরা সহজ ভাষায় এবং কার্যকর তথ্য পেয়ে সমস্যা চিহ্নিত করতে সক্ষম হোক।

কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ সমূহ

Pain on both sides of the waist2

কোমরের দুই পাশে ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি কখনো সাধারণ পেশি ক্লান্তি, কখনো মাসিক বা গর্ভাবস্থার প্রভাব, আবার কখনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। ব্যথার ধরন, সময়কাল এবং অবস্থানের পরিবর্তন অনুযায়ী কারণগুলো ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে নারীরা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কারণে প্রায়শই এই সমস্যার শিকার হন।

১. দীর্ঘক্ষণ বসার ফলে কোমরের দুই পাশে পেশির খিঁচুনো বা ব্যথা

দৈনন্দিন কাজের কারণে অনেক নারী দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা ডেস্কের সামনে বসে থাকেন। এটি কোমরের পেশিকে দুর্বল করে এবং দুই পাশে ব্যথার কারণ হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ বসার ফলে পেশির রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যা ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। ঘাড় ও কোমরের সমন্বয়হীন অবস্থানও এই সমস্যা বাড়ায়।

সঠিক আসন ও বসার পদ্ধতি না মানলে লম্বা সময়ে মেরুদণ্ডের পেছনের পেশি শক্ত হয়ে যায়। এতে কোমরের দুই পাশে হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যথা অনুভূত হয়। দিনের শেষে ব্যথা তীব্র হলে এটি শারীরিক অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিয়মিত স্ট্রেচিং এবং হালকা ব্যায়াম এই সমস্যার সমাধান করতে সহায়ক।

বাংলাদেশে অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় বসে থাকা নারীরা এই সমস্যার প্রতি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রতিদিন অন্তত ২০–৩০ মিনিটের বিরতি এবং হালকা হাঁটাহাঁটি করা উচিত।

২. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কোমরের দুই পাশে চাপ সৃষ্টি করা

অতিরিক্ত ওজন কোমরের পেশি ও হাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ দুই পাশে ব্যথা, অস্থিরতা এবং মাঝে মাঝে চলাফেরায় সমস্যা তৈরি করতে পারে। স্থূলতার কারণে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক পরিবর্তিত হয়, যা কোমরের পেশিতে চাপ বাড়ায়।

বাংলাদেশে খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়মিত ব্যায়ামের কারণে ওজনের সমস্যা বেড়ে গেছে। ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোমরের পেশি ক্লান্ত হয়ে যায়, যা ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এই সমস্যার প্রতিকার হিসেবে কাজ করে।

ওজন কমানোর জন্য হালকা ব্যায়াম, যোগব্যায়াম এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া সহায়ক। এছাড়া অতিরিক্ত তেল, চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার কমানো উচিত।

আরোও পড়ুনঃ  ব্লাড ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে?

৩. গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তন এবং কোমরের পেশির চাপ

গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে হরমোন পরিবর্তনের ফলে কোমরের পেশি শিথিল হয়ে যায়। ভ্রুণের বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোমরের দুই পাশে ব্যথা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে এটি তীব্র হয়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় পেশির শক্তি কমে যাওয়ায় হঠাৎ বসা বা ওঠার সময় ব্যথা অনুভূত হয়। এই সময়ে সঠিক শারীরিক অবস্থান এবং হালকা ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে অনেক নারী বাড়িতে দৈনন্দিন কাজকর্মের কারণে অতিরিক্ত চাপ অনুভব করেন।

গর্ভকালীন যোগব্যায়াম, হালকা হাঁটাহাঁটি এবং পেশি শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম কোমরের ব্যথা কমাতে সহায়ক।

৪. মাসিক চক্রের সময় হরমোনজনিত কোমরের দুই পাশে ব্যথা

মাসিকের আগে বা সময়ে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে নারীর কোমরের পেশি শিথিল হয়ে যায়। প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন হরমোনের কারণে পেশি সংকুচিত হলে ব্যথা দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত দুই পাশে হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যথা হিসেবে প্রকাশ পায়।

বাংলাদেশে অনেক নারী এই ব্যথাকে সাধারণ মনে করে, কিন্তু দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হালকা ব্যায়াম, গরম পানির ব্যাগ ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

৫. কিডনি বা মূত্রনালী সংক্রান্ত সমস্যা

কিডনি স্টোন বা সংক্রমণও কোমরের দুই পাশে ব্যথার প্রধান কারণ। এই ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় এবং প্রায়শই পেছনের অংশ থেকে পেটের দিকে ছড়ায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালা, রঙ পরিবর্তন বা ঘনত্ব বৃদ্ধি সংক্রান্ত লক্ষণও লক্ষ্য করা যায়।

বাংলাদেশে গরম জলবায়ু এবং অনিয়মিত জলপানের কারণে কিডনির সমস্যা সাধারণ। পর্যাপ্ত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ এই সমস্যার প্রতিকার হতে পারে।

৬. পেশি বা লিগামেন্ট আঘাত

হঠাৎ বা ভারী বস্তু ওঠানো, খারাপ ভঙ্গিতে বসা বা ওঠার ফলে কোমরের পেশি বা লিগামেন্টে আঘাত হতে পারে। এটি দুই পাশে তীব্র ব্যথা এবং চলাফেরায় সমস্যা সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশে গৃহকর্মী বা কৃষিকাজে নারীরা প্রায়শই ভারী কাজের ফলে এই সমস্যার সম্মুখীন হন। হালকা বিশ্রাম, গরম কম্প্রেস এবং শারীরিক অবস্থান ঠিক রাখলে ব্যথা কমে।

৭. অস্টিওআর্থরাইটিস বা মেরুদণ্ডের সমস্যার কারণে

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মেরুদণ্ডের হাড় ও সংযোগস্থলের ক্ষয় হতে পারে। এটি দুই পাশে ক্রমাগত ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অস্টিওআর্থরাইটিসে পেশি শক্ত হয়ে যায়, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশে বয়স্ক নারীদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাদ্য সহায়ক। গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৮. গ্যাস্ট্রিক বা পাচনতন্ত্রের সমস্যা

কোমরের দুই পাশে ব্যথা কখনো পাকস্থলী বা অন্ত্রের সমস্যা থেকেও হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডায়রিয়া বা কনস্টিপেশন দুই পাশে পেছনের অংশে ব্যথা সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবারের কারণে এটি সাধারণ। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, পর্যাপ্ত পানি এবং প্রয়োজনমতো ওষুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

৯. স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ পেশিতে টান সৃষ্টি করে। এটি বিশেষ করে কোমরের দুই পাশে ব্যথা হিসেবে প্রকাশ পায়। বাংলাদেশে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের চাপ নারীদের ওপর প্রভাব ফেলে।

যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া পেশির স্বাভাবিক শক্তি বজায় রাখতে হালকা ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ।

১০. অপর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুমের অভাব

পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম না হলে পেশি দুর্বল হয়। দুর্বল পেশি দুই পাশে ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঘুমের অভাবের কারণে শরীরের হরমোন ও মেরুদণ্ডের সমন্বয় বিঘ্নিত হয়।

আরোও পড়ুনঃ  সারা শরীরে চুলকানি হলে কি করণীয়?

বাংলাদেশে অনেক নারী ঘুমের ঘাটতি ও অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে এই সমস্যার সম্মুখীন হন। সঠিক ঘুম এবং হালকা ব্যায়াম পেশির স্বাভাবিক শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক।

কোমর ব্যথা কিসের লক্ষণ?

Pain on both sides of the waist3

কোমরের ব্যথা প্রায়শই শরীরের ভেতরের সমস্যা বা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রতিফলন। এটি কখনো হালকা অস্বস্তি হিসেবে শুরু হয়, আবার কখনো গুরুতর রোগের ইঙ্গিতও দিতে পারে। অনেক সময় মানুষ এটি সাধারণ ক্লান্তি বা বয়সজনিত সমস্যা মনে করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোমরের ব্যথা বিভিন্ন রোগের সূচক হতে পারে।

কোমরের ব্যথা সাধারণত তিন ধরণের লক্ষণ দেখায়। প্রথমটি হলো পেশি বা হাড়ের সমস্যা। যেমন দীর্ঘক্ষণ বসা, ভারী বস্তু ওঠানো বা পেশির আঘাত। এই ক্ষেত্রে ব্যথা সাধারণত দুই পাশে, হালকা থেকে মাঝারি তীব্রতা পর্যন্ত হয় এবং কখনো কখনো নিতম্ব বা পায়ের দিকে ছড়ায়।

দ্বিতীয় লক্ষণ হলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংক্রান্ত সমস্যা। কিডনি, মূত্রনালী, লিভার বা অন্ত্রের সমস্যা কোমরের দুই পাশে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিডনিতে পাথর বা সংক্রমণ থাকলে পেছনের অংশ থেকে পেটের দিকে ব্যথা ছড়ায়। বাংলাদেশে গরম জলবায়ু এবং কম পানি পান করার কারণে কিডনির সমস্যা বেশি দেখা যায়।

তৃতীয় লক্ষণ হলো হরমোনজনিত বা নারীর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা। গর্ভাবস্থা, মাসিক চক্র, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা—এসব কারণে কোমরের পেশি শিথিল হয়ে ব্যথা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী নারীদের কোমরের পেছনে চাপ, ভারী ওজন এবং হরমোন পরিবর্তনের কারণে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

কোমরের ব্যথার সঙ্গে যদি জ্বর, ঘন রঙের প্রস্রাব, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বা চলাফেরায় সমস্যা দেখা দেয়, তবে এটি গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকায় অনেক নারী সাধারণ ক্লান্তি মনে করে চিকিৎসা নেন না, যা সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।

দৈনন্দিন জীবনধারায় মানসিক চাপ ও স্ট্রেসও কোমরের ব্যথার একটি লক্ষণ। শিক্ষার্থী, গৃহকর্মী বা অফিসে কর্মরত নারীরা চাপের কারণে পেশি টান অনুভব করেন, যা দুই পাশে ব্যথা হিসেবে প্রকাশ পায়।

একইভাবে, অপর্যাপ্ত ঘুম এবং অনিয়মিত জীবনযাপনও কোমরের ব্যথার সূচক। ঘুম কম হলে শরীরের পেশি দুর্বল হয়ে যায়, যা ব্যথা সৃষ্টি করে। এছাড়া স্থূলতা বা ওজনের সমস্যা থাকলে কোমরের হাড় ও পেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ব্যথার লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।

কোমরের ব্যথা কখনো গ্যাস্ট্রিক বা পাচনতন্ত্রের সমস্যা থেকেও হতে পারে। ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা আলসারের কারণে পেছনের অংশে ব্যথা ছড়াতে পারে। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং হালকা ওষুধে কমানো যায়।

শুধু ব্যথার তীব্রতা নয়, ব্যথার ধরনও লক্ষণ বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ, তীব্র বা দম বন্ধ করার মতো ব্যথা গুরুতর সমস্যা নির্দেশ করতে পারে, যেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে এ ধরনের লক্ষণ প্রায়ই অবহেলিত থাকে।

সর্বোপরি, কোমরের ব্যথা শুধু অস্থিরতা নয়, এটি শরীরের বিভিন্ন জটিলতা, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন এবং মানসিক চাপের প্রতিফলন। তাই ব্যথার ধরন, সময়কাল এবং সঙ্গে থাকা অন্যান্য লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতা নেওয়া জরুরি।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

 কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ সমূহ এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

আরোও পড়ুনঃ  লিভার সিরোসিসের প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ

কোমরের দুই পাশে ব্যথা হলে কী ধরনের খাদ্য খাওয়া উচিত এবং কী বর্জন করা উচিত?

কোমরের ব্যথা কমাতে পেশি শক্তি ও হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখা জরুরি। তাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন দুধ, দই, মাছ, ডাল এবং সবুজ শাক-সবজি খাওয়া উচিত। এছাড়া ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারও সহায়ক। অতিরিক্ত তেল, চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ফাস্ট ফুড থেকে বিরত থাকা ভালো। পর্যাপ্ত পানি পান এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

দৈনন্দিন জীবনে কোমরের ব্যথা কমাতে কি ধরণের ব্যায়াম বা সচেতনতা অবলম্বন করা যায়?

দৈনন্দিন জীবনে হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম এবং হাঁটাহাঁটি কোমরের পেশি শক্ত রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘক্ষণ বসার সময় প্রতি ৩০–৪৫ মিনিট অন্তর ভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত। ভারী বস্তু ওঠানোর সময় সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এছাড়া ঘুমের সময় মজবুত ম্যাট্রেস এবং সঠিক অবস্থান ব্যথা কমাতে কার্যকর। মানসিক চাপ কমানোও কোমরের পেশির স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

কোমরের দুই পাশে ব্যথা বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা, যা কখনো হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু হয়ে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এটি শুধু পেশি ক্লান্তি নয়, বরং অনেক সময় শরীরের ভেতরের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে। তাই এই ব্যথাকে অবহেলা করা উচিত নয়।

দৈনন্দিন জীবনযাপনে সঠিক আসন ও বসার ভঙ্গি, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি এবং হালকা ব্যায়াম কোমরের পেশি শক্ত রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘক্ষণ বসা বা ভারী বস্তু ওঠানো থেকে বিরত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা, পর্যাপ্ত পানি পান এবং ওজন নিয়ন্ত্রণও ব্যথা কমাতে সহায়ক।

নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা এবং মাসিক চক্রের সময় হরমোন পরিবর্তনের কারণে কোমরের পেশি শিথিল হয়। তাই গর্ভবতী নারী এবং মাসিককালীন নারীদের জন্য বিশেষ যত্ন ও হালকা ব্যায়াম জরুরি। এছাড়া স্ট্রেস ও মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম এবং ধ্যানও কার্যকর।

কিডনি বা মূত্রনালী সংক্রান্ত সমস্যা, অস্টিওআর্থরাইটিস, গ্যাস্ট্রিক বা পাচনতন্ত্রের জটিলতা—এসবও কোমরের দুই পাশে ব্যথার সাধারণ কারণ। তাই ব্যথার সঙ্গে যদি জ্বর, প্রস্রাবের সমস্যা, চলাফেরায় অসুবিধা বা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।

বাংলাদেশে অনেক নারী এই ব্যথাকে সাধারণ ক্লান্তি মনে করে চিকিৎসা নেন না। এতে সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী এবং গুরুতর রূপ নিতে পারে। তাই সচেতন হওয়া এবং প্রয়োজনমতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

উপসংহারে বলা যায়, কোমরের দুই পাশে ব্যথা কোনো একক সমস্যা নয়, এটি শরীরের বিভিন্ন দিকের প্রতিফলন। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানো—এসবই প্রতিরোধমূলক উপায়। পাশাপাশি, কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তার দেখানো সবচেয়ে নিরাপদ।

সঠিক যত্ন এবং সচেতনতা গ্রহণ করলে কোমরের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বাংলাদেশি নারীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে এই সমস্যার প্রভাব কমাতে পারেন। ব্যথার প্রকৃতি এবং সময়কাল পর্যবেক্ষণ করাই মূল চাবিকাঠি।

পরিশেষে, কোমরের দুই পাশে ব্যথা শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা নয়, এটি স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। তাই সতর্কতা, নিয়মিত চেকআপ এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *