বেগুন চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি সমূহ
বেগুন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সবজি। প্রায় সব অঞ্চলে বাগান বা মাঠে সহজে চাষ করা যায়। বেগুন শুধু খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে না, বরং এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এর মধ্যে ভিটামিন সি, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কিছু খনিজ উপাদান রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সঠিকভাবে সার ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুন গাছের বৃদ্ধি, ফলন এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি করা যায়। বাংলাদেশে বেগুন চাষে অনেক চাষি এখনও সার ব্যবহারে সঠিক জ্ঞান রাখেন না।
বেগুন চাষের জন্য জমি প্রস্তুতি, বীজ বপন, পানি এবং সার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার ব্যবহারে যদি সঠিক সময়, পরিমাণ এবং প্রকার অনুসরণ করা হয়, তবে বেগুন গাছ স্বাস্থ্যকরভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ভালো মানের ফল দেয়। আবার অযথা সার ব্যবহারের ফলে জমি নষ্ট হওয়া, ফলন কম হওয়া এবং গাছের রোগ বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব।
বেগুন গাছের বৃদ্ধি তিনটি ধাপে বিভক্ত করা যায়—বীজ বপন থেকে গাছের শিকড় গঠন, ফুল ও ফল গঠন এবং শেষ পর্যন্ত পাকা ফল। প্রতিটি ধাপে সঠিক সার প্রয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে ছোট-বড় সব বাগানেই বেগুন চাষের জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান।
সঠিক সার ব্যবস্থাপনা কেবল ফলন বাড়ায় না, বরং মাটি দীর্ঘমেয়াদি উর্বরতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। এতে চাষিদের খরচ কমে আসে এবং বাজারে বেগুনের মান উন্নত হয়। সার ব্যবহারে অম্লীয় বা ক্ষারীয় জমির জন্য আলাদা আলাদা পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।
এক কথায়, বেগুন চাষে সার ব্যবস্থাপনা হলো সফল চাষের মূল চাবিকাঠি। এটি সঠিকভাবে জানা ও অনুসরণ করলে চাষি ভালো ফলন পাবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মান বজায় থাকবে।
বেগুন গাছে সার দেওয়ার নিয়ম

বেগুন গাছের সঠিক বৃদ্ধি এবং ফলন বৃদ্ধির জন্য সার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার গাছের পুষ্টি সরবরাহ করে, মাটির উর্বরতা বজায় রাখে এবং ফলের মান উন্নত করে। বাংলাদেশে বেগুন চাষিরা প্রায়শই ইউরিয়া, ডিএপি, জিপসাম, কাচা গোবর বা কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেন। তবে সার দেওয়ার সঠিক নিয়ম না জানা থাকলে ফলন কমতে পারে এবং গাছের রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রথমে মাটি পরীক্ষা করা খুব জরুরি। মাটিতে পিএইচ, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ এবং অর্গানিক উপাদানের মাত্রা জানা গেলে সার দেওয়ার সঠিক পরিকল্পনা করা যায়। বেগুনের জন্য সাধারণত হালকা দোআঁশ বা ল্যাটেরাইট মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
বেগুন চাষে সার দেওয়ার সময় তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয়—বীজতলা থেকে চারা রোপণ পর্যন্ত, চারা গাছের বৃদ্ধিকালে এবং ফুল ও ফল গঠনের সময়। প্রথম ধাপে কম্পোস্ট বা গোবর মাটিতে মিশিয়ে দিতেই হবে। দ্বিতীয় ধাপে ইউরিয়া বা নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করলে গাছের লম্বা বৃদ্ধি হয়। তৃতীয় ধাপে পটাশ ও ফসফরাস সমৃদ্ধ সার দিলে ফুল ও ফল ভালো হয়।
সার দেওয়ার পদ্ধতি ঠিক না থাকলে গাছের শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সার দেওয়ার সময় পানি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দেওয়া বা খোঁড়াখুঁড়ি করে মাটির সাথে মিলিয়ে দেওয়া ভালো। সার দেওয়ার পর মাটি সামান্য চিপে দিয়ে পানি দেওয়া হলে পুষ্টি দ্রুত শিকড়ে পৌঁছায়।
বেগুন গাছের সার ব্যবস্থাপনা কেবল ভালো ফলন নিশ্চিত করে না, বরং রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধেও সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, সঠিক সময়ে পটাশ সার ব্যবহার করলে ফলের গাঢ় রঙ ও টেকসই পাকা হয়। ইউরিয়া বা নাইট্রোজেন বেশি দিলে লতা বেশি বৃদ্ধি পায়, কিন্তু ফুল কম আসে। তাই সার দেওয়ার সময় পরিমাণ ও ধরণ সঠিকভাবে জানাটাই মূল।
বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটির ধরন অনুযায়ী সার দেওয়ার নিয়ম কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। তবে মূল নিয়ম হলো—মাটি পরীক্ষা, সঠিক সার নির্বাচন, নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োগ, পানি দিয়ে মিশিয়ে দেওয়া এবং ফলন পর্যবেক্ষণ। এই নিয়ম মেনে চললে বেগুন চাষে উর্বর ফলন এবং ভালো মানের বেগুন পাওয়া সম্ভব।
বেগুন চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি সমূহ

বেগুন চাষে সঠিক সার প্রয়োগ ফলন বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিমাণ ও সময়মতো সার ব্যবহার করলে গাছের বৃদ্ধি, ফুল এবং ফলন উন্নত হয়। এছাড়া সঠিক সার ব্যবস্থাপনা মাটির উর্বরতা বজায় রাখে এবং রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধে সহায়ক। বাংলাদেশে বেগুন চাষের জন্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ এবং অর্গানিক সার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে কার্যকর।
১. বীজতলা বা চারা রোপণের আগে সার প্রয়োগ
বীজতলা প্রস্তুতির সময় কম্পোস্ট বা গোবর মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এই সময় মাটিতে প্রয়োজনীয় অর্গানিক উপাদান সরবরাহ করলে চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- মাটিতে ২–৩ কেজি কম্পোস্ট প্রতি বর্গমিটার হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।
- চারা রোপণের আগে মাটিতে ইউরিয়া ও ডিএপি মিশ্রণ দিলে শিকড় শক্ত হয়।
- সার দেওয়ার পর মাটির উপর সামান্য চিপে দিয়ে পানি দিতে হবে।
- মাটির জলে সার সমানভাবে মিশে গেলে শিকড় থেকে পুষ্টি গ্রহণ দ্রুত হয়।
- অর্গানিক সার ব্যবহারে মাটি দীর্ঘমেয়াদি উর্বর থাকে।
- অনেক চাষি প্রাথমিক পর্যায়ে বেশি নাইট্রোজেন দেয়, যা গাছের লতা বৃদ্ধি করে।
২. গাছের বৃদ্ধিকালে নাইট্রোজেন সার
চারা গাছ ২০–২৫ দিন বয়সে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই সময় নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করতে হবে।
- ইউরিয়া বা অ্যামোনিয়াম সালফেট ব্যবহার করা হয়।
- প্রতি বর্গমিটারে ২০–২৫ গ্রাম ইউরিয়া পর্যাপ্ত।
- সার দেওয়ার পর পানি দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
- নাইট্রোজেন বেশি দিলে লতা বৃদ্ধি পায়, তবে ফুল কম আসে।
- পর্যাপ্ত পানি দিলে নাইট্রোজেন কার্যকরভাবে শিকড়ে পৌঁছায়।
- মাটি যদি খাড়া বা বালুকাবৎ হয়, সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
৩. ফুল গঠনের সময় ফসফরাস সার
ফুল এবং ফলনের জন্য ফসফরাস গুরুত্বপূর্ণ। ফুল গঠনের সময় ফসফরাস সার দেওয়া উর্বর ফলন দেয়।
- ডিএপি বা টিএসপি ব্যবহার করা যায়।
- প্রতি গাছে ১৫–২০ গ্রাম ডিএপি দেওয়া যথেষ্ট।
- সার গাছের চারপাশে খোঁড়াখুঁড়ি করে মাটির সাথে মিলিয়ে দিতে হবে।
- ফুলে পুষ্টি পৌঁছালে ফল বড় এবং মজবুত হয়।
- ফসফরাস কম দিলে ফল ছোট এবং শুষ্ক হতে পারে।
- পানি দেওয়ার সময় সার সমানভাবে মিশানো গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ফল গঠনের সময় পটাশ সার
ফল মজবুত করতে এবং রঙ উন্নত করতে পটাশ গুরুত্বপূর্ণ।
- কাস্টিক পটাশ বা মুরিয়েট অব পটাশ ব্যবহার করা যায়।
- প্রতি গাছে ১০–১৫ গ্রাম পটাশ পর্যাপ্ত।
- পটাশ সার মাটিতে চিপে দিয়ে পানি দেওয়া উত্তম।
- ফল বড়, চকচকে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- পটাশ কম হলে ফল নরম ও সহজে নষ্ট হয়।
- সঠিক পরিমাণ পটাশ দিলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।
৫. অর্গানিক সার প্রয়োগ
গোবর বা কম্পোস্ট ব্যবহার মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
- প্রতি বর্গমিটারে ২–৩ কেজি গোবর ব্যবহার করা যায়।
- অর্গানিক সার মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে।
- গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- বীজতলা ও চারা রোপণের সময় অর্গানিক সার সবচেয়ে কার্যকর।
- এই সার দীর্ঘমেয়াদি ফলন নিশ্চিত করে।
- সার মিশ্রণের সাথে পানি দিলে দ্রুত পুষ্টি শিকড়ে পৌঁছায়।
৬. সার পটানো পদ্ধতি
সার পটানোর সময় মাটি আগেভাগে চাষ করা উচিত।
- মাটিতে সার ছড়িয়ে খুঁড়ি করা হয়।
- গাছের চারপাশে সার চিপে দিয়ে মিশ্রণ করা উত্তম।
- পানি দিয়ে সার কার্যকরভাবে মিশানো যায়।
- সার জমে না রাখতে পর্যায়ক্রমে পানি দেওয়া জরুরি।
- এই পদ্ধতি ফলন বৃদ্ধি করে।
- সার সমানভাবে দিলে গাছের সব অংশে পুষ্টি পৌঁছায়।
৭. তরল সার ব্যবহারের পদ্ধতি
কয়েকটি সময়ে তরল সার ব্যবহার করা যায়।
- নাইট্রোজেন বা পটাশ তরল আকারে দেওয়া সুবিধাজনক।
- প্রতি গাছে ৫০–১০০ মিলি তরল সার পর্যাপ্ত।
- পাতা স্প্রে করলে গাছ দ্রুত পুষ্টি গ্রহণ করে।
- তরল সার দ্রুত ফলন বাড়ায়।
- বৃষ্টি হলে সার দ্রুত মাটিতে প্রবেশ করে।
- এই পদ্ধতি ছোট আকারের বাগানে বেশি কার্যকর।
৮. সার দেওয়ার সময় সতর্কতা
সার দেওয়ার সময় কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি।
- অতিরিক্ত নাইট্রোজেন দিলে লতা বেশি বৃদ্ধি পায়।
- ফসফরাস ও পটাশ সময়মতো না দিলে ফলন কমে।
- গাছের মূলের কাছে সরাসরি ইউরিয়া না দেওয়া উচিত।
- পানি দিয়ে মিশিয়ে দিলে শিকড়ে সমানভাবে পৌঁছায়।
- মাটির আর্দ্রতা পর্যাপ্ত হলে সার কার্যকর।
- সার দেওয়ার পর পর্যবেক্ষণ করলে ফলন ভালো হয়।
৯. মাটির ধরন অনুযায়ী সার প্রয়োগ
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি ভিন্ন।
- দোআঁশ মাটিতে কম সারই যথেষ্ট।
- বালুকাবৎ মাটিতে বেশি অর্গানিক সার দরকার।
- লাইট মাটিতে ইউরিয়া কম ব্যবহার করা ভালো।
- ভারী মাটিতে পানি দেওয়ার পরে সার ব্যবহার উত্তম।
- মাটির পিএইচ পরীক্ষা করে সার নির্ধারণ করা উচিত।
- সঠিক মাটি-বিশ্লেষণ ফলন নিশ্চিত করে।
১০. পর্যায়ক্রমে সার ব্যবহার
বেগুন গাছের সার ব্যবস্থাপনা একবারে নয়, পর্যায়ক্রমে করা উচিত।
- বীজতলা থেকে শুরু করে ফলন পর্যায় পর্যন্ত ধাপে ধাপে সার দিতে হবে।
- প্রতিটি ধাপে প্রয়োজনীয় সার দেওয়া ফলন বাড়ায়।
- অতিরিক্ত সার দেওয়া ক্ষতিকর।
- পর্যায়ক্রমিক ব্যবহার মাটি ও গাছকে স্বাস্থ্যবান রাখে।
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলে কোন সময় কোন সার দিতে হবে তা জানা যায়।
- এই পদ্ধতি মেনে চললে বেগুনের মান ও পরিমাণ দুটোই ভালো হয়।
বেগুন গাছে কি সার দিতে হবে?

বেগুন গাছের জন্য সঠিক সার নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সার ব্যবহার না করলে ফলন কমে যেতে পারে এবং গাছের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে। সাধারণত বেগুন চাষে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ এবং অর্গানিক সার ব্যবহার করা হয়।
নাইট্রোজেন সার গাছের লতা বৃদ্ধি ও সবুজ পাতা নিশ্চিত করে। তবে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন দিলে গাছ শুধু লতা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু ফুল ও ফল কম আসে। তাই এই সার নির্দিষ্ট পরিমাণে দিতে হবে।
ফসফরাস সার মূল ও ফুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ডিএপি বা টিএসপি ব্যবহার করলে ফুল বেশি হয় এবং ফলের আকার বড় হয়। পটাশ সার মূলত ফলের রঙ, গঠন ও টেকসই পাকা নিশ্চিত করে। কাস্টিক পটাশ বা মুরিয়েট অব পটাশ ব্যবহার করা যায়।
অর্গানিক সার বা গোবর ব্যবহারে মাটি উর্বর থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বীজতলা থেকে চারা রোপণ পর্যন্ত গোবর মাটিতে মিশিয়ে দিলে গাছ স্বাস্থ্যবান হয়।
বাংলাদেশের মাটির ধরন অনুযায়ী সার প্রয়োগের মাত্রা সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে। দোআঁশ মাটিতে কম সার যথেষ্ট হয়, কিন্তু ভারী বালি মাটিতে পরিমাণ বেশি রাখা ভালো। সঠিক সময়ে সার দেওয়া এবং পানি দিয়ে মিশিয়ে দেওয়া ফলন নিশ্চিত করে।
সার দেওয়ার প্রধান নিয়ম হলো—নাইট্রোজেন লতা বৃদ্ধির জন্য, ফসফরাস ফুল ও ফলন বৃদ্ধির জন্য, পটাশ ফলের গঠন ও রঙের জন্য, আর অর্গানিক সার মাটির উর্বরতার জন্য। এই সমন্বয় মানলে বেগুন গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও উচ্চ মানের ফলন নিশ্চিত হয়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
বেগুন চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
বেগুন গাছে কোন সময় কোন সার দেওয়া উচিত?
বেগুন গাছের সার দেওয়ার সময় তিনটি ধাপ রয়েছে। বীজতলা বা চারা রোপণের আগে অর্গানিক সার বা গোবর মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা বৃদ্ধিকালে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করলে লতা বৃদ্ধি পায়। ফুল গঠনের সময় ফসফরাস সার দিলে ফুল ও ফলনের মান বৃদ্ধি পায়। ফল গঠনের সময় পটাশ সার দেওয়া উচিত, যাতে ফল বড়, চকচকে এবং টেকসই হয়। এই ধাপে পানি দিয়ে সার মিশিয়ে দেওয়া উত্তম। পর্যায়ক্রমিক এবং সঠিক পরিমাণে সার দেওয়াই ভালো ফলনের চাবিকাঠি।
বেগুন চাষে অর্গানিক সার ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অর্গানিক সার বা গোবর বেগুন চাষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায়, আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বীজতলা থেকে চারা রোপণ পর্যন্ত মাটিতে অর্গানিক সার ব্যবহার করলে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘমেয়াদে এই সার মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার কমিয়ে দেয়। অর্গানিক সার ব্যবহারে ফলন বৃদ্ধি পায় এবং ফলের মান উন্নত হয়, ফলে চাষি লাভবান হন।
উপসংহার
বেগুন চাষে সফলতার মূল চাবিকাঠি হলো সঠিক সার ব্যবস্থাপনা। সার শুধুমাত্র গাছের পুষ্টি দেয় না, বরং গাছকে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাশালী, ফলনকে মানসম্মত এবং মাটিকে দীর্ঘমেয়াদে উর্বর রাখে। বাংলাদেশে বেগুন চাষের জন্য ইউরিয়া, ডিএপি, পটাশ এবং অর্গানিক সার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে কার্যকর। প্রতিটি সার গাছের নির্দিষ্ট বৃদ্ধি পর্যায়ে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে। নাইট্রোজেন লতা বৃদ্ধির জন্য, ফসফরাস ফুল ও ফলনের জন্য, পটাশ ফলের রঙ ও গঠন নিশ্চিত করতে এবং অর্গানিক সার মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা বজায় রাখতে সহায়ক।
সার ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র ফলন বৃদ্ধিতেই নয়, বরং চাষির আর্থিক সাশ্রয় এবং বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মান বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে এবং পরিমাণমতো সার দেওয়ার মাধ্যমে চাষি গাছের সব পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারেন। বীজতলা থেকে চারা রোপণ, চারা বৃদ্ধিকাল এবং ফল গঠনের পর্যায়—এই প্রতিটি ধাপে সঠিক সার দেওয়া ফলনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যায়।
বাংলাদেশের মাটির ধরন ও জলবায়ুর বৈচিত্র্য অনুসারে সার ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে। দোআঁশ মাটিতে তুলনামূলক কম সার ব্যবহার যথেষ্ট হয়, তবে ভারী বালি মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বেশি রাখা ভালো। মাটি পরীক্ষা করে সঠিক সার নির্বাচন করলে গাছের পুষ্টি গ্রহণ সমানভাবে হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়।
অর্গানিক সার ব্যবহারে মাটি দীর্ঘমেয়াদে উর্বর থাকে, পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব চাষ সম্ভব হয়। এছাড়া, পর্যায়ক্রমিক সার ব্যবহার গাছকে স্বাস্থ্যবান রাখে এবং রোগ-ব্যাধির ঝুঁকি কমায়। বেগুন চাষে সার ব্যবস্থাপনা কেবল ফলন বাড়ায় না, বরং চাষির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মান নিশ্চিত করে।
সার দেওয়ার সময় পানি দিয়ে মিশিয়ে দেওয়া, মাটির সাথে ভালোভাবে মিলিয়ে দেওয়া এবং পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। গাছের আকার, লতা, ফুল এবং ফলের মান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলে, কোন সময় কোন সার দেওয়া প্রয়োজন তা সহজেই বোঝা যায়। এই নিয়ম মেনে চললে বাংলাদেশে বেগুন চাষে উচ্চ মানের ফলন, স্বাস্থ্যবান গাছ এবং লাভজনক ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব।
এক কথায়, বেগুন চাষে সঠিক সার ব্যবস্থাপনা হলো চাষির জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ। এটি দীর্ঘমেয়াদে মাটির স্বাস্থ্য, গাছের সুস্থতা এবং চাষির আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সার ব্যবস্থাপনার প্রতি যত্নবান চাষি নিশ্চিতভাবে সফল, লাভজনক এবং টেকসই বেগুন চাষ করতে সক্ষম হবেন।
