হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার সমূহ
হার্ট আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। এটি রক্ত সঞ্চালন করে শরীরের প্রতিটি কোষকে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছে দেয়। হার্টের সমস্যা বা রোগ শুধুমাত্র বয়স্কদের নয়, বর্তমানে যুবক এবং মধ্যবয়সী মানুষের মধ্যেও বাড়ছে। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ, চর্বিযুক্ত খাবার, মানসিক চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন হার্টের রোগ বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
হার্টের সমস্যা প্রাথমিকভাবে সহজ লক্ষণ দিয়ে শুরু হতে পারে, যেমন বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি। এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করলে সমস্যা আরও জটিল হয়ে যেতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে হার্ট এটাক, হার্ট ফেইলিওর বা মৃত্যু পর্যন্ত যেতে পারে।
শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা, সুস্থ খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক শান্তি হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে অনেকেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন না, যার কারণে প্রাথমিক সমস্যাগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়।
এই ব্লগে আমরা হার্টের সাধারণ লক্ষণ, প্রতিকার, এবং জরুরি পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। এতে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশি পাঠকেরা স্বাস্থ্যকর জীবনধারায় অনুপ্রাণিত হবে।
হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার সমূহ

হার্টের সমস্যা প্রাথমিকভাবে শরীরে বিভিন্ন সংকেত দেয়, যেমন বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি বা হঠাৎ দুর্বলতা। এসব লক্ষণ অনেক সময় উপেক্ষা করা হয়, যা পরে গুরুতর ঝুঁকিতে পরিণত হয়। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রেস এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা হার্টের রোগের হার বাড়াচ্ছে। প্রাথমিক সতর্কতা ও সঠিক প্রতিকার নিলে জীবন রক্ষা সম্ভব।
১. বুকের ব্যথা বা চেপে ধরা অনুভূতি এবং এর প্রতিকার
বুকের ব্যথা হার্টের সমস্যার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। এটি হঠাৎ বা ধীরে ধীরে হতে পারে। বাংলাদেশে অনেকেই এই ব্যথাকে সাধারণ পেটের গ্যাস বা ক্লান্তি মনে করেন। তবে হার্টের ব্যথা সাধারণত বুকের বাম দিকে চাপ বা চেপে ধরা অনুভূত হয়।
ব্যথা হাত, পিঠ, ঘাড় বা চোয়ালে ছড়াতে পারে। চাপ, শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের সময় এটি আরও তীব্র হতে পারে। প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম নিলে কিছুটা কমে যেতে পারে, তবে পূর্ণ মুক্তি আসে না।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চাপ কমানো গুরুত্বপূর্ণ। যদি ব্যথা ১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় বা শ্বাসকষ্টের সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতাল বা ডাক্তারকে দেখানো আবশ্যক।
বাংলাদেশে, বিশেষ করে শহরে, মানুষ অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে প্রাথমিক সতর্কতা অবহেলা করেন। তবে প্রাথমিক প্রতিকার হিসেবে বিশ্রাম, হালকা হাঁটাচলা এবং প্রয়োজনমতো ডাক্তার পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
২. শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাস নেওয়ার সমস্যা এবং উপশমের উপায়
হঠাৎ বা ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লু নয়, বরং হার্টের সংকেত হতে পারে। শ্বাসকষ্ট বিশেষত রাতে বা বিশ্রামের সময় বেড়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশে যারা গরম, আর্দ্র আবহাওয়ায় দীর্ঘ সময় বাইরে থাকেন, তাদের জন্য এটি আরও লক্ষ্য করা সহজ। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে ঘাম, দুর্বলতা বা বুকের চাপ থাকলে বিশেষ সতর্কতা জরুরি।
উপশমের জন্য প্রথমে বসে বা সামান্য এগিয়ে থাকা অবস্থায় শ্বাস নেওয়া জরুরি। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ, ওষুধ সঠিকভাবে নেওয়া এবং হালকা ব্যায়াম সহায়ক।
শ্বাসকষ্ট হঠাৎ দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে, হার্টের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অপরিহার্য।
৩. হঠাৎ দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা: কারণ ও প্রতিকার
হঠাৎ দুর্বলতা, মাথা ঘোরা বা হালকা ভাব অনুভূত হলে তা হার্টের সমস্যার পূর্বাভাস হতে পারে। রক্তচাপ কমে যাওয়া বা হার্টের রক্ত সরবরাহ অল্প সময়ের জন্য ব্যাহত হলে এমন ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশে বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় কাজের সময়, পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া বা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে দুর্বলতা বেশি দেখা যায়। তবে বারবার হলে হার্ট পরীক্ষা জরুরি।
প্রাথমিক প্রতিকার হিসেবে বিশ্রাম, হালকা পানি পান এবং শরীরকে স্থির রাখা গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদে হার্টের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে।
৪. হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা কমে যাওয়া এবং নিয়ন্ত্রণ
হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বা কমে যাওয়া হার্টের সমস্যার অন্যতম চিহ্ন। দ্রুত বা অনিয়মিত স্পন্দন (প্যালপিটেশন) হঠাৎ অনুভূত হতে পারে।
বাংলাদেশে স্ট্রেস, অতিরিক্ত কফি বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যও এই অস্বাভাবিকতা বাড়াতে পারে। তবে এটি নিয়মিত বা হঠাৎ বেশি হলে ডাক্তারকে দেখানো জরুরি।
প্রাথমিক প্রতিকার হিসেবে চাপ কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য এবং পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। চিকিৎসক কখনও ওষুধ বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামের মাধ্যমে হার্ট মনিটর করতে পারেন।
৫. ক্লান্তি ও শক্তি কমে যাওয়া: লক্ষণ ও জীবনধারার পরিবর্তন
হৃদরোগ থাকলে শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। এর ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা দেখা দেয়। বাংলাদেশে ব্যস্ত জীবনধারা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এই সমস্যা বাড়ায়।
উপশমের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং ওষুধ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
৬. পায়ে ফোলা বা শরীরের অন্যান্য অংশে তরল জমা: কারণ ও প্রতিকার
হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকলে শরীরে তরল জমে পায় বা পায়ের গোড়ায় ফোলা দেখা দিতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদী হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণ হতে পারে।
বাংলাদেশে যারা বেশি সময় দাঁড়িয়ে কাজ করেন বা লম্বা সময় বসে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে পায়ে ফোলা বেশি দেখা যায়। চিকিৎসক ডায়ুরেটিক ওষুধ বা জীবনধারার পরিবর্তন সুপারিশ করতে পারেন।
নিয়মিত পায় উঁচু করে বিশ্রাম, কম লবণযুক্ত খাদ্য এবং হালকা হাঁটাচলা প্রতিকার হিসেবে কার্যকর।
৭. অনিয়মিত বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এবং তা কমানোর উপায়
হঠাৎ অতিরিক্ত ঘাম বা অনিয়মিত ঘাম হার্টের সমস্যার লক্ষণ। সাধারণভাবে ঘাম শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলেও বারবার বা অপ্রত্যাশিত হলে সতর্ক হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এটি আরও লক্ষ্য করা যায়। তবে ঘাম দ্রুত বাড়লে ডাক্তারকে দেখানো জরুরি।
উপশমের জন্য চাপ কমানো, হালকা ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান এবং ডাক্তার পরামর্শ অপরিহার্য।
৮. হঠাৎ কাশি বা ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ এবং প্রতিকার
হৃদরোগ থাকলে ফুসফুসে পানি জমতে পারে, যা হঠাৎ কাশি বা শ্বাসকষ্টের কারণ হয়। এটি হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার সংকেত।
বাংলাদেশে আর্দ্র আবহাওয়ায় এবং ধূলিময় পরিবেশে কাশি সহজে দেখা দিতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদী বা হঠাৎ কাশি হলে ডাক্তারকে দেখানো জরুরি।
উপশমের জন্য ডাক্তার ওষুধের পাশাপাশি জীবনধারা পরিবর্তন, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং নিয়মিত চেকআপ সুপারিশ করতে পারেন।
৯. হৃদয়জনিত অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করতে নিয়মিত পরীক্ষা
হার্টের সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সহজ নয়। তাই ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম বা রক্ত পরীক্ষা নিয়মিত করা জরুরি। বাংলাদেশে যারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা অবহেলা করেন, তাদের জন্য সমস্যা দেরিতে ধরা পড়ে।
নিয়মিত পরীক্ষা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং প্রাথমিক সতর্কতা গ্রহণের সুযোগ দেয়। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, চর্বিযুক্ত খাদ্য ও স্ট্রেসে আক্রান্তদের জন্য পরীক্ষা অপরিহার্য।
১০. স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস হার্টের জন্য অপরিহার্য
হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং মানসিক শান্তি অপরিহার্য। বাংলাদেশে প্রচলিত তেল-মশলাযুক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাদ্য ও দীর্ঘ সময় বসে থাকা হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
ফলের সঙ্গে সবজি, কম লবণযুক্ত খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি পান এবং নিয়মিত হাঁটাচলা হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়ক। মানসিক চাপ কমানোও অপরিহার্য।
হার্ট এটাক এর প্রাথমিক চিকিৎসা

হার্ট এটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন একটি জরুরি পরিস্থিতি, যা হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে ঘটে। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্ট্রেস এবং ধূমপান হার্ট এটাকের প্রধান ঝুঁকিকর কারণ। হার্ট এটাক সাধারণত বুকের চেপে ধরা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা এবং ঘামের সাথে হঠাৎ দুর্বলতা দিয়ে প্রকাশ পায়।
প্রাথমিকভাবে রোগীকে শান্ত অবস্থায় রাখা জরুরি। তাকে সরাসরি শুয়ে না বসিয়ে আধা বসানো অবস্থায় রাখা ভালো, যাতে ফুসফুসে রক্তপ্রবাহ এবং শ্বাসপ্রবাহ সহজ হয়। দ্রুত মেডিকেল হেল্প আহ্বান করা আবশ্যক। বাংলাদেশে শহর অঞ্চলে হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হলেও গ্রামীণ এলাকায় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা নিকটস্থ ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ জরুরি।
প্রাথমিক চিকিৎসায় অ্যাসপিরিন গ্রহণ করতে বলা হয়, যা রক্ত পাতলা করতে এবং ধমনীর ব্লক কমাতে সাহায্য করে। তবে ওষুধ গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি রোগী অজ্ঞান বা বমি বমি ভাব অনুভব করে, তখন নিজের বা অন্যের মাধ্যমে ওষুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
হৃদয় এটাকের সময় অ্যালার্ম হিসেবে এন্টি-চেস্ট পেইন ওষুধ যেমন নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা ডাক্তার অনুমোদনের পরে। প্রাথমিকভাবে রোগীর মানসিক চাপ কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আতঙ্ক বা চিৎকার হৃদপিণ্ডের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে।
শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন সাপোর্ট প্রদান জরুরি হতে পারে। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ সাধারণ, তবে গ্রামীণ এলাকায় প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম এবং ফুসফুসের সুবিধাজনক অবস্থান নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
হার্ট এটাকের সময় দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো এবং ইসিজি, ব্লাড টেস্ট ও থেরাপি শুরু করা জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। প্রাথমিক চিকিৎসা না নিলে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি স্থায়ী হতে পারে।
পরিবার ও আশেপাশের মানুষকে রোগীর পাশে রাখা এবং শারীরিক হেল্প দেওয়া জরুরি। হঠাৎ হার্ট এটাকের প্রাথমিক চিকিৎসায় দেরি করা জীবনহানির প্রধান কারণ। বাংলাদেশে সচেতনতা বৃদ্ধি করলে অনেক জীবন রক্ষা সম্ভব।
দীর্ঘমেয়াদে, হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, স্ট্রেস কমানো, ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনধারার পরিবর্তন রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার সমূহ এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
হার্ট এটাকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী কী এবং কবে ডাক্তার দেখানো জরুরি?
হার্ট এটাকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো বুকের চেপে ধরা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হঠাৎ দুর্বলতা, ঘন ঘন ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা এবং হাত বা চোয়ালে ব্যথা ছড়ানো। বাংলাদেশে অনেকেই এগুলোকে সাধারণ ক্লান্তি বা গ্যাসের সমস্যার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেন। তবে লক্ষণগুলো ১৫–২০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে বা শ্বাসকষ্ট ও বমি সহ থাকলে অবিলম্বে ডাক্তার বা হাসপাতাল দেখা জরুরি। প্রাথমিক চিকিৎসা জীবন রক্ষা করতে পারে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইসিজি বা রক্তচাপ পরিমাপ এবং সতর্ক থাকা প্রাথমিক শনাক্ত ও ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। পরিবারের সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ হঠাৎ হার্ট এটাকের সময় রোগী নিজের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত?
হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অপরিহার্য। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি পান, ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো, মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুম স্বাস্থ্য রক্ষা করে। বাংলাদেশে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বাইরে দীর্ঘ সময় থাকা এবং তেল-মশলাযুক্ত খাদ্য হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, এবং ডাক্তার পরামর্শ গ্রহণ প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং পরিবার ও আশেপাশের সহায়তা মিলে হার্টের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
উপসংহার
হার্ট আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত সঞ্চালন করে শরীরের প্রতিটি কোষকে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছে দেয়। হার্টের সমস্যাগুলো প্রাথমিকভাবে সহজ লক্ষণ দিয়ে শুরু হলেও অনেক সময় তা উপেক্ষা করা হয়। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রেস, চর্বিযুক্ত খাদ্য, ধূমপান এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন হার্টের রোগ বৃদ্ধির মূল কারণ।
বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, পায়ে ফোলা—এই সব লক্ষণকে উপেক্ষা করলে হার্ট এটাক বা হার্ট ফেইলিওর পর্যন্ত জটিলতা তৈরি হতে পারে। প্রাথমিক সতর্কতা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া জীবন রক্ষায় সহায়ক।
হার্টের সমস্যা কখনও স্বাভাবিকভাবে সেরে যায় না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত এবং সঠিক চিকিৎসা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে চিকিৎসা সহজলভ্য হলেও গ্রামীণ অঞ্চলে সচেতনতার অভাব এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুরত্ব প্রাথমিক শনাক্তকে কঠিন করে তোলে।
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য এবং মানসিক চাপ কমানো হার্টের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। অতিরিক্ত লবণ, তেল-মশলাযুক্ত খাবার এবং বসে থাকার জীবনধারা হার্টের সমস্যা বাড়ায়।
হার্ট এটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা যেমন রোগীকে শান্ত রাখা, আধা বসানো অবস্থায় রাখা, অ্যাসপিরিন ও নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহারের পরামর্শ এবং দ্রুত হাসপাতাল পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদক্ষেপ রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে।
শ্বাসকষ্ট, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, অতিরিক্ত ঘাম বা হঠাৎ দুর্বলতা দেখা দিলে তা অবিলম্বে ডাক্তার দেখানোর সংকেত। পরিবার এবং আশেপাশের মানুষের সহায়তাও জরুরি।
দীর্ঘমেয়াদে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো এবং মানসিক শান্তি হার্টের রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। বাংলাদেশে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক প্রতিকার এবং জীবনধারার পরিবর্তন হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
উপসংহারে, হার্টের রোগ কখনও স্বাভাবিকভাবে ভালো হয় না। প্রাথমিক শনাক্ত, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ রোগের ঝুঁকি কমাতে, জীবনমান উন্নত করতে এবং মৃত্যু রোধ করতে সাহায্য করে। সচেতনতা, নিয়মিত চেকআপ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা হলো হার্ট রোগ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।
